Episode 1 : Amer Fort
ভারতবর্ষে প্রায় ৬০০ র বেশি দুর্গ আছে, তারমধ্যে ২৫০ টা এই মহারাষ্ট্রে আর ৯০ টার মতো হ্যাঁ, অবশ্যই রাজস্থানে |বহুদিন ধরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে-ঘুরে আমার বেশ কিছু ধরণের জায়গা মনে ধরেছে, তারমধ্যে এই কেল্লা, দুর্গ, নগরদুর্গ, অট্টালিকা অন্যতম | আজ অব্দি অনেকগুলো কেল্লা বা দুর্গ যেটা বলবেন দেখেছি, তাতে থেকেছি, ইমারত টিকে অনুভব করেছি এবং সবশেষে তাদের ভাস্কর্য-চিত্রকলা-শিল্প-কারুকার্য দেখে আমি মুগ্ধ কিন্তু আমার দৃষ্টি মুগ্ধতা পায় নি, পাবেও না | এক জীবনে তা সম্ভব না আর পরের জীবন বলে যদি কিছু থাকে তা এই বর্তমান জীবনের সাথে থোড়াই না carry forward হবে !
অযথা non-stop বকবক করার সুবিধে কি জানেন? প্রচুর information পাওয়া যায় তবে হ্যাঁ বিপদ-আপদও জোটে কপালে, সেটা থাক কেননা সেটা জুটেই যাবে | 'দুর্গ_কথা' নাম দিয়ে একটা series শুরু করলাম | যতটা তথ্য জোগাড় করতে পেরেছি লোকজনের সাথে অনর্গল কথা বলে, বন্ধুত্ব করে, জ্ঞান দিয়ে, তাদের কাছ থেকে জিনিস পত্র কিনে, কারোর কারোর বাড়ি গিয়ে, কখনও আবার তাঁদের রাগ-বিরক্তের কথা শুনেও সব একসাথে রাখলাম |
আসলে এখন যে দুর্গগুলো আছে সব কয়েক'শ বছর আগেকার, নতুন করে এদেশে আর কেউ দুর্গ বানায় নি | তবে আমি মনে করি এগুলোর কোনোটাই পুরোনো না, হয়তো ভেঙে পড়েছে, ইট-পাথর দাঁত বের করে ফেলেছে তাও বলবো এই স্থাপত্যগুলো সময়কে বয়ে নিয়ে চলছে, যুগ-যুগ ধরে সাক্ষী হয়ে আছে, কত কথা, কত ব্যাথা, কত হাসি-কান্না, প্রমোদ, হাতবদল, বিশ্বাস ঘাতকতা, ষড়যন্ত্র, প্রেম-ভালোবাসা, অঙ্গীকারের প্রতীকী চিহ্ন হয়ে রয়েছে | আর যত দিন এই হাঁদা-ভোঁদা মানব সভ্যতা থাকবে এই অট্টালিকা গুলো নীরবে বলে যাবে আমাদের 'আমি ছিলাম, আমি থাকবো ‘ |
রাজস্থানের Amer Fort নিয়ে series টা শুরু করছি, confuse ছিলাম কোন দুর্গ বা কেল্লা নিয়ে প্রথম শুরু করবো ভেবে | আদ্যক্ষর অনুযায়ী 'A-অ/আ ' দিয়ে শুরু করলাম | গত Decembere এ রাজস্থান গিয়েছিলাম, মোটে তিনটে জায়গা যেতে পেরেছি কেননা আমি খুব 'ল্যাদ' খেয়ে ঘুরি, প্রচুর সময় লাগে আমার দেখতে, বুঝতে আর feel করতে | রাজধানী শহর জয়পুর থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত Amer বা Amber দুর্গ, যা কিনা ভগবান Ambalikeswar র আদ্যক্ষর অনুসারে নামকরণ হয়েছে |
Panoramic view of the Amer Fort |
Note: In future if you wish to visit Amer Fort this article can be used as Tour Guide.
জয়পুর তথা রাজস্থানের এক উল্লেখযোগ্য ফোর্ট হলো Amer Fort যা কিনা, আরাবল্লী পর্বতমালা আর মাওতা ঝিলের মাঝে ৪ বর্গ কিমি জুড়ে অবস্থিত | এতো বড়ো ফোর্টটি একবারে বানানো হয় নি, দশম শতাব্দী থেকে কেল্লাটি তৈরি শুরু হয় আর বিভিন্ন উত্তরসূরির দ্বারা কেল্লার নানানজায়গায় অদলবদল, কোথাও আকারে কিছুটা পরিবর্তন এবং অধিকাংশ জায়গা গুলো প্রসারিত করা হয় | যার ফলে আজকের এই বিরাটাকৃতি সুপ্রসিদ্ধ Amer Fort | হাতে তিন-চার ঘন্টা নিয়ে কেল্লা দেখতে যাবেন, কারণ এতে অনেক গল্প লুকিয়ে আছে, সেগুলো খুঁজে বের করতে বেশ কিছু সিঁড়ি ভাঙতে সিঁড়ি, তাই মাঝে-মাঝে বিশ্রাম দরকার | আর আমার মতো যদি এক দরজার কারুকার্য বা পাথরের খোদাই দেখেই হ্যাঁ হয়ে যান তাহলে তো পুরোদিন লাগবে | পারলে সকাল দশটার মধ্যে পৌঁছে যান, পাহাড়ি রাস্তা বেলার দিকে যানজট হয়ে যায় ফলে আপনাকে রাস্তা থেকে অনেকটা হাঁটতে হবে তাতে ফোর্ট দেখার energy কিছুটা কমে যেতে পারে। Ashutosh Gowariker নির্দেশিত Bollywood movie যোধা-আকবরের অনেকখানি এই ফোর্ট শ্যুটিং হয়েছিল | Amer Fort থেকে এক ২ কিমি পথের সুড়ঙ্গ পাশের Jaigarh Fort ফোর্ট অব্দি গেছে , যা এখনো চালু রয়েছে, ইচ্ছে হলে যেতে পারেন না হলে বাইরে গিয়ে আবার অতটা হেঁটে যেতে হবে আরকি |
The tunnel connects Amer Fort and Jaigarh Fort. |
অনুরোধ : ফোর্টের মুখে সাজানো-গোছানো হাতি দেখতে পাবেন যা আপনাকে কেল্লার সূর্য দুয়ার (পরে বিস্তারিত বলছি ) অব্ধি পৌঁছে দেবে | একটি একান্তই বিশেষ অনুরোধ দয়া করে এদের পিঠে চড়বেন না | আপনি যদি হাঁটতে অক্ষম হন যাবেন না এই fort-এ, কারণ সূর্য দুয়ার থেকে পুরো fort আপনাকে নিজের পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখতে হবে | হাতি-ঘোড়া উটের পিঠে চড়তে বারণ করায় আমার অনেকের সাথে ঝামেলা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে, তবুও আমি বারণ করবো |
Please avoid the Elephant ride. |
রাস্তা থেকে fort-এ ঢোকার পথেই ইয়াবড় মাওতা ঝিল দেখতে পাবেন, এই ঝিলটিই fort-র বাসিন্দাদের জলের যোগান দিয়ে এসেছে | প্রায় ৬ দশক ধরে কাছ্বাহাস রাজপুত রাজবংশ সপরিবারে এখানে থাকতেন | এই fort-এ মুঘল স্থাপত্য চোখে পড়ার মতো, মানে প্রতিটা দেয়াল, ধনুকাকৃতি দরজা খিলান, শিশ-মহল, সভা মণ্ডপ সর্বত্র নানারকমের পার্সি শব্দ ও মুঘল শিল্পীদের কারুকার্য রাজপুত শিল্পে প্রভাব ফেলেছে | তার প্রথম কারণ পনেরোশো শতাব্দীতে আমের রাজ্যের রাজপুত রাজা ভারমাল তার এক কন্যার সাথে তৎকালীন মুঘল শাসক আকবরের সাথে বিয়ে দিয়ে রাজপুতদের সাথে মুঘলদের আত্মীয়তা শুরু করে ফলে প্রায় দুশো বছর ধরে আমেরে কোনো রকম হামলা বা যুদ্ধ হয় নি | ইতিহাসে সেই কন্যা হরখা বাঈ বা হীরা কুমারী নাম পরিচিত আর media তে তিনি বিখ্যাত যোধা নামে | এই শুরু মুঘলদের সাথে আমের তথা জয়পুর ঘরানার আত্মীয়তা যা বহুদিন যাবৎ চলেছিল | ভারমালের নাতি রাজা প্রথম মান সিং আকবরের নবরত্নের এক সদস্য ছিলেন, সম্পর্কে আকবর তার পিসেমশাই ফলে রাজা মান সিং-ও আকবরের মতো শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য ও কাব্যে পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন, যার প্রমান আজকের এই Amer Fort | প্রথম মান সিংয়ের সময়েই Amer Fortে সবচেয়ে বেশি স্থাপত্য, ভাস্কর্য, খোদাই কাজ, কারুকার্য, বিস্তৃত লাভ করেছিল | তৎকালীন গুজরাত থেকে আগ্রা যাবার বাণিজ্যিক পথে আমের পড়তো, তা আকবরের সাথে সুসম্পর্কের ফলে Amer Fort বা Amer রাজ্যে কোনো রকমের বিপদের আশঙ্কা ছিল না বলতে গেলে | এই প্রথম মান সিং-ই মেবারের রাজা মহরানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল সেই গুজরাত-আগ্রার বাণিজ্যিক পথের বিস্তার নিয়ে |
ইতিহাস শেষ, এবার শুধু দুর্গের কথাই বলবো | গঠনের দিক দিয়ে দুর্গে বেশ বড়ো কয়েকটা প্রাঙ্গন রয়েছে সেই হিসেবে পুরো দুর্গটিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, জলেব চউক, দিওয়ান-ই-আম, শিশ মহল ও চার বাগ এবং শেষ অংশ জেনানা | পুরো কেল্লাটি লাল, গোলাপি আর হলুদ বেলেপাথরের তৈরি | কেল্লায় মোট চারটি 'দ্বার' আছে | আমি কেল্লার প্রথম প্রবেশদ্বার 'সূর্য দ্বার' বা ‘সুরজ পোল’ থেকে বর্ণনা শুরু করলাম |
সুরজ পোল : নাম শুনে কিছুটা হয় অনুমান করতে পারলেন, প্রথম সূর্যের আলো দুর্গের এই অংশটিতেই পরে তাই তার নাম সূর্য দিয়ে | বিশালাকৃতি এক দরজা যাতে অসংখ্য intricate কারুকার্য রয়েছে, প্রথমেই চোখ ধাঁধানোর জন্য যথেষ্ট | কেল্লার বাইরের অংশে বেশিরভাগটাই গোলাপি আর হলুদ রঙের বেলেপাথর থাকায় তাতে সকালের সূর্যের আলো, আর যদি সময়টা ভরা বর্ষা বা তার একটু পরেই হয় তাহলে চারপাশের হাল্কা-ঘন সবুজ এক কথায় ম্যাজিক করে, এটা দেখতে হলে সকালে যেতে হবে দুর্গে |
the entrance view of Suraj Pole |
চাঁদ পোল : সুরজ পোলের উল্টো দিকে আকারে ছোটো আর এক দ্বার নাম 'চাঁদ পোল'। দুটো দুয়ার দিয়েই দুর্গের সবচেয়ে বড়ো আঙিনায় আসা যায় যার নাম 'জলেব চউক', যেখান থেকে আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে | জলেব একটি পার্সি শব্দ যার অর্থ 'soldier square' | যুদ্ধে জয়ের পর সৈন্য দের সম্মানপ্রদর্শনার্থে জলেব চউক-এ রাজপরিবারের সদস্যরা, রাজসভার নর্তকী-সংগীতজ্ঞ ও আমেরের সাধারণ মানুষেরা একজায়গায় হতো | 'জলেব চউক' র architecture রাজপুত রাজকীয়তার শৌর্য-র প্রতীক | এছাড়া বছরের অন্যান্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো যেমন শীলা মাতার পুজো, দোলপূর্ণিমা, অনুষ্ঠানের সময়েও 'জলেব চউক' এ সবাই একত্রিত হতো, রাজার সাথে দেখা করার জন্য একমাত্র রাজপরিবারে মেয়েরা ছাড়া | কি অদ্ভুত না ? 😒😌 নিজের বাড়িতেও তাঁরা সবাই চিক বা পর্দার আড়ালে থাকতেন, সব কিছু ওই উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দূর থেকে দেখতে হতো | 'রাজপরিবারের মেয়েরা' কথাটায় শুধু রাজকীয়তাই আছে, তাঁদের জন্য ফোর্টের একদম শেষ প্রান্তে আলাদা মহল ছিল যেখানে শুধু মাত্র রাজা ও তার ঘনিষ্ট জনেদের প্রবেশর অনুমতি ছিল | সে নিয়ে পরে লিখছি | চাঁদ পোল নামক দ্বারটি দিয়ে সাধারণ জনগণ আসত আর সুরজ পোল ছিল রাজপরিবার, বিশেষ অথিতি ও বাকি সভাসদ দের প্রবেশ পথ |
View of Jaleb Chawk from Diwan-e-Aam |
শিলা মাতার মন্দির : জলেব চউক পেরিয়ে এগোলেই fort-র দেয়ালে চোখ জুড়ানো সুক্ষ architecture দেখতে পাবেন। এক কালী মন্দির, মন্দিরের দরজায় নজরকাড়ার মতো সাদা মার্বেল ও রুপোর জাঁকজমক কারুকার্জ | মন্দির চত্বর সবসময় ভিড় সুতরাং বিগ্রহ দেখা কপালে নাও জুটতে পারে | শিলা মাতা কালী দেবীর একরূপ | মূর্তিটি শ্বেত পাথরের তৈরি যা তৎকালীন রাজা প্রথম মান সিং যশোর তথা অবিভক্ত বাংলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থাপন করেছিলেন | এটি রাজস্থানের বহু পুরোনো মন্দির যার গরিমা রাজার ধার্মিকতা, আভিজাত্য ও মহত্ত্ব প্রমান করে আজও |
সিংহ দুয়ার : দিওয়ান-ই-আম র প্রবেশ পথ হলো সিংহ দুয়ার এককালে চমৎকার fresco র কাজ ছিল এই দুয়ারে | এক গুরুত্বপূর্ণ ও মজার ব্যাপার আছে এই সিংহ দুয়ারে | কোনো ভাবে 'দুশমন' যদি এখানে এসে পৌঁছায় তাদের দুর্গে ঢুকতে হলে 90 degree angle এ ঘুরতে হবে যেটা খুব অস্বাভাবিক | এর ফলে দুর্গের সৈন্য-সামন্তরা বেশ কিছুটা সময় পেয়ে যায় |
দিওয়ান-ই-আম বা hall of audience : পার্সি শব্দ যা মুঘল জামানায় এদেশ এসেছে | ইতিহাসের বইয়ে সবাই মোটামুটি এর সন্মন্ধে পড়েছি | দেশি ভাষায় দিওয়ান-ই-আম কে 'সভা মণ্ডপ' বলা হতো | আগেই বলেছি জয়পুর-মুঘল রাজপরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল সে সূত্রে জয়পুরের সব দুর্গ-কেল্লাতেই মুঘল স্থাপত্য ও নামকরণ অনেকখানি জায়গা নিয়ে আছে | Amer Fort-র এই 'দিওয়ান-ই-আম' ঐশ্বর্য ও আভিজাত্যের প্রীতিক | মোট ৪০ খানা স্তম্ভ ও ৯ টা ধানুকাকৃতি খিলানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই ঐতিহাসিক প্রাঙ্গনটি যা মুঘল-রাজপুত শিল্প, স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যের সুসাদৃশ্য মেলবন্ধন | স্তম্ভ-র বাইরের দিকে রক্তিম বেলেপাথরের ও ভেতরের দিকে শ্বেত মার্বেল পাথরের সুদৃশ্য কারুকার্য | দিওয়ান-ই-আম ছিল প্রজা ও সাধারণ মানুষের জন্য | নির্দিষ্ট দিনে মহারাজা এক কারুকার্যময় আয়তাকার উঁচু আসনে বসে প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা, তাঁদের সমস্যা শুনতেন এবং বিভিন্ন বিচার, শলা, পরামর্শ করতেন | মহারাজের আসনের ঠিক পেছনে ৩ টি ছোট বন্ধ দরজা আছে যেগুলোর একটায় Umaras অর্থাৎ সর্দার, একটায় উজির বসতেন যিনি মহারাজকে ঐদিনের টাটকা রাজ্যের টাটকা খবর শোনাতেন, মানে news paper পড়তেন |
২৭ কাছারি : এক মধ্যযুগীয় শব্দ যার মানে হলো office | এখানে বেশ কিছু কুঠুরি আছে যাতে পরিচালকগোষ্ঠী বিভিন্ন পদে অধিষ্টান ব্যক্তি তাদের দপ্তরের দৈনন্দিন কাজ করতেন | কিছু পার্সি শব্দ যেমন saddad-ul-saddar, দিওয়ান, takht-e-murassa এই কাছেরীতে ছিল | কাছারির jharokha মানে ধনুকাকার ঝুলন্ত বারান্দায় এলে মনোরম মোহনবাড়ি বা মনবাড়ি বাগান দেখা যাবে যা আসলে 'Kesar Kyari বাগ' নামে পরিচিত ছিল | মহারাজের হারেমের সদস্যাদের জন্য নাকি এই লাজবাবঃ বাগানটি তৈরি করেছিল | বাগানে আসার জন্য নাকি জেনানা থেকে কপিকলে টানা যানের ব্যবস্থা ছিল | দুর্গের যত ভেতরে যাবেন বাঁদিক বরাবর এই 'Kesar Kyari বাগ' কে দেখা যাবে | মহারাজের নিজকক্ষ থেকেও এই অতীব সুন্দর বাগানটি দেখা যায় |
The 27 Kachheheri |
হামাম : কাছারির থেকে আরো এগিয়ে গেলে বাঁদিকে 'হামাম' পরবে, সাবান ভেবে বসবেন না | হামাম আরবি শব্দ যার মানে স্নান এটি মুঘল-রাজপুত সংস্কৃতির এক সংকলন যা মহারাজা ও রাজপরিবারের সদস্য দের Bathroom ছিল | হামাম দিওয়ান-ই-খাসের লাগোয়া | এতে ঠান্ডা ও গরম জলের আলাদা chamber আছে, সাথে Massage Room, Sauna Bath ও ওয়াশরুম | দুর্গের অন্যতম দর্শনীয় অংশ শিশ মহল থেকে সরাসরি হামামে যোগাযোগ ছিল |
Hammam, the royal bathroom inside the fort |
গনেশ দুয়ার : কারুকার্যময় অতি সুন্দর ফোর্টের সবচেয়ে সুদৃশ্য দ্বার যার ওপরে গনেশজির রঙিন চিত্র করা আছে | চিরাচরিত ভাবে গনেশজি মুখ দর্শনার্থীদের সামনের দিকে থাকে কিন্তু এখানে তার মুখের একদিন দেখা যাচ্ছে শুধু | এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন মতামত রয়েছে কেউ বলে গনেশ তার পিতামাতাকে পাহারা দেবার জন্য যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল এই দেত্তয়ালে অঙ্কিত চিত্রটি তারই অনুসারে আঁকা যেখানে রাজা-রানী নিজেকে ভগবানের দূত হিসেবে দেখিয়েছে | এই দ্বারের দুটো তলা আছে, ওপরের তলাটি জাফরির সুহাগ মন্দির যা অতি আশ্চর্যময় fresco চিত্রে ভরপুর যার মাধ্যমে রাজবংশীয় মহিলারা দিওয়ান-ই-খাসে অনুষ্ঠিত নানান অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতেন | ভেতরের দিক দিয়ে সুহাগ মন্দির যাবার রাস্তা রয়েছে | গনেশ দুয়ারটি মির্জা রাজা জয় সিং তৈরি করেছিলেন যা উঁচু ধানুকাকৃতি খিলান রঙ্গিন কাঁচ ও fresco চিত্রের অতিসুন্দর শিল্প | এখানে রাজস্থানি শৈলীর ঝুলন্ত বারান্দা বা কারুকার্যময় Jharokha ও flat ছত্রী আছে যা মুঘলদের অর্ধ চন্দ্রাকৃতি আকারের ছত্রীর চেয়ে আলাদা |
The Ganesh Pole, well depicted onside face of Ganapati can be seen in the top of gate. The latticework of Suhag Mandir is on the 2nd storey of the gate. |
দিওয়ান-ই-খাস বা জয় মন্দির : এখন আমরা ফোর্টের তৃতীয় অংশে আছি | দিওয়ান-ই-খাস ও এক পার্শি শব্দ যার অর্থ Hall of Private audience যেটা শিশ মহল, জাস মন্দির বা Hall of Glory, সুখ মন্দির ও চারবাগ নিয়ে তৈরি | বাঁদিকে শিশ মহল মানে কাঁচের ঘর যেটা Amer Fort-র সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস | প্রায় ৬ বছর লেগেছিলো পুরোটা তৈরি করতে | রাজপরিবারের পুরুষ সদস্য দের একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে থাকার ঘর ছিল এই মহল | অত্যন্ত সুন্দরভাবে ছোট ছোট কাছের টুকরো দিয়ে বেলেপাথরের তৈরি চার দেয়াল, ওপরের ceiling এ নানা রকমের ফুলের ও জ্যামিতিক নকশা করে তৈরি এই কাঁচের ঘর | এক সামান্য মোমবাতির আলোতেও পুরো মহল ঝলমল করে উঠে কাঁচের টুকরো গুলো তারসাথে সঙ্গত দিয়ে অনির্বচনীয় রঙ, সুচারু ছবি, চিত্র | একবার just ভাবুন এক সন্ধ্যে বেলায় জয়পুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ঘুঙুরের আওয়াজ, বাইরে জলের ফোঁয়ারা আর শিশ মহলের সব ঝাঁড়বাতি, দেয়ালের আলো যখন একসাথে জ্বলে উঠতো কি mindblowing আলোকিত দৃশ্যই না তৈরি হতো | শীত কালে ঘর গরম রাখার জন্য এই কাঁচের মহল বানিয়েছিলেন রাজা জয় সিং যেখানে রাজস্থানি অপরূপ ভাস্কর্য চোখে পরবে | মণি-মুক্তো খোচিত দেয়াল যা বিশেষ অথিতি আপ্পান্নয়নের জন্য এক সেরা মহল | Motif চিত্রতে মুঘল রচনাশৈলী দেখা যাবে | পুরো মহল টি প্রজাপতি, নানা প্রকারের রঙ্গিন ফুল, পাতা, অলংকৃত পাত্র সবেতেই মুঘল শৈলী যাতে মুঘল অথিতিরা সহজেই খুশি হন | শিশ মহলের এই আশ্চর্য জাঁকজমক কারুকার্য রাজস্থানি কলা কুশলীদের ও তাঁদের শিল্পের উচ্চ মান বুঝিয়ে দেয় |
চারবাগ : বাঁদিকে শিশ মহল ও ডানদিকে সুখ নিবাসকে রেখে মাঝখানে যে ঘন সবুজ এক প্রতিসম বাগান দেখতে পাবেন সেটাই তো চারবাগ | দিল্লি ও আগ্রায় এ ধরণের সামঞ্জস্য বাগান অনেক আছে যা দুর্গের একদম ভেতরে অবস্থিত ও চারদিক তার দুর্গের বিভিন্ন অংশের সাথে যুক্ত | পুরোপুরি মুঘল রীতিতে বানানো এই চারবাগ | যেহেতু প্রাসাদ বা দুর্গের চারদিকের সাথে যুক্ত থাকে এই সবুজ গালিচা রূপ বাগানটি তাই তার নাম চারবাগ | বাগানের ঠিক মাঝ খানে এক জ্যামিতিক Star আছে | এককথায় এক সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে আরো ঘন সবুজ একটি তাঁরা আর সেখানে একটি ফোঁয়ারা |
সুখ মন্দির (Hall of Pleasure) : শিশ মহল যেমন শীত কালের জন্য সুখ নিবাস ছিল গরম কালে থাকার জায়গা তাই Summer Palace ও বলে | এই মহলের দরজা একটি সুদের কারুকার্যের চন্দন কাঠের | সুখ নিবাসের ওপরে এক জলাধারের মতো ঘেরা জায়গা আছে | এই অংশের দেয়ালে মার্বেলের খচিত ও ঝর্ণার বাব্যস্ত করা ছিল যাকে Chini Khana Niche বাংলায় কুলুঙ্গি বলে যেখানে পাইপে করা আনা জল সরবরাহ করে রাখা হতো এবং একটি খোলা চ্যানেলের মাধ্যমে সেই জল প্রবাহিত হতো যা এই গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে শীতল পরিবেশ বজায় রাখতো | সাদা কালো মার্বেলের তৈরি আঁকাবাঁকা অসংখ ছিদ্রযুক্ত এই চ্যানেল দিয়েই বাকি জল বাগানে প্রবাহিত হয়ে ফোঁয়ারার ব্যবহৃত হতো | জল যখন এই সরু চ্যানেল দিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলতো এক শীতল পরিবেশ আর তার সাথে সুমিষ্ট আওয়াজে পুরো মহল ভোরে যেত তাই এই মহলকে সুখ নিবাস বলতো | পাইপের মাধ্যমে জল এনে এক কৃত্তিম ঝর্ণা তৈরি করা হয়েছে | রাজস্থানের অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এই পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল | Water Lift এ করে লেকের জল জলাধা তোলা হতো | এই মহল থেকে চারবাগ বাগানটি দেখা যায় | সুখ মন্দিরের ভেতরে বেশ কিছু পাল্কি এখনো রাখা আছে সেগুলো উৎসবে-অনুষ্ঠানে রানীদের এক মহল আর এক মহলে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হতো কারণ অত্যাধিক অলংকৃত পোশাক আর তার সাথে ওজনে ভারী গয়না পরে রানীরা নড়াচড়া করতে পারতো না তো হাঁটাচলা তো অনেক দূর, রাজকীয়তা ! পাল্কিতে একটাই বসার জায়গা যেটা অবশ্যই চারপাশে ঢাকা | ফোর্টের ভেতরে চলাচল করার সময় বিশেষ করে দিওয়ান-ই-খাসে বেশ কিছু Ramp আছে যেগুলো এই পাল্কি চলার জন্য বিশেষ ভাবে বানানো হয়েছিল |
Ramp throughout the interior of fort which is used mainly for the palanquin to carry the Queens within the fort |
দিওয়ান-ই-খাস থেকে সরু passage মান সিংয়ের প্যালেস অব্দি গেছে | রাজা প্রথম মান সিং তত্ববধানে ২৫ বছর ধরে এই প্যালেস তৈরি হয়েছিল | এটি ফোর্টের সবচেয়ে পুরোনো অংশ যেখানে প্রায় ৬০০ বছর ধরে রাজপরিবার থেকে গেছে | বলতে গেলে ফোর্টের হার্ট হলো এই মান সিংয়ের প্যালেস | Mural Paintings, fresco অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে | চাকর-বাকরদের জন্য প্যালেসের পাশাপাশি ঘর ছিল | Amer থেকে Jaipur পাকাপাকি ভাবে চলে যাবার পরও এই প্যালেসে নবরাত্রির ৯ দিন রাজপরিবারের লোকজনেরা থাকতে আসতেন |
জেনানা : The Ladies Chamber, ফোর্টের একেবারে শেষ প্রান্তে আমরা পৌঁছে গেছি | এই অংশে সবসময় ঘুঙরু, চুড়ি, পায়েল, মলের ছম-ছম, ঝুন-ঝুন, ঝন-ঝন আওয়াজ হতো | জেনানা একটি আরবি শব্দ | মহারানী সহ রাজার অন্যান্ন রানীরা তো থাকতোই তার সাথে উপপত্নীরাও এবং রাজপরিবারের বাকি মেয়েরাও এখানে থাকতো | এখানে সবার জন্য আলাদা আলাদা ঘর বরাদ্দ ছিল | রাজা প্রথম মান সিং জেনানা তৈরি করেন | উঁচু টাওয়ার, বিরাট বড়ো জাফরিতে ঢাকা বারান্দা, প্রাঙ্গন আর অসংখ্য ছোট-বড়ো ঘর আছে | উঁচু জাফরির দেয়াল পর্দার কাজ করতো যাতে বাইরের থেকে কেউ দেখতে না পায় | সুরক্ষার জন্য জেনানা ফোর্টের শেষ প্রান্তে ছিল | জানানোর প্রাঙ্গনে ১২টি arched পিলার দিয়ে তৈরি অংশকে বারাদারী বলতো | একমাত্র মহারাজা ছাড়া এখানে কারোর আসার অধিকার ছিল না | দররক্ষীরাও সব eunuch ছিল এখানকার যারা জেনানার একদম ওপরে এক ছত্রীর নিচে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতো | শিশ মহলের পর সবচেয়ে বেশি কারুকার্য জেনানাতেই দেখা যায় । তবে এক একটা দুর্গে এক এক রকমের কারুকার্য জেনানায় করা হতো জয়পুরের Amer Fort-র জেনানার সাথে যোধপুরের মেহরানগড় ফোর্টের জেনানার অনেক পার্থক্য আছে |
Zenana, the chamber for the royal ladies |
তৎকালীন সমাজে রাজপূত মেয়েদের সাহসের কথা আমরা এখনো শুনি | সত্যি তারা সাহসী ছিলেন, যুদ্ধের সময় যখন কোনো পুরুষ দুর্গে থাকতো না রানীরা নিজেরা দুর্গের সুরক্ষায় থাকতেন | কিন্তু তাদের সারাটা জীবন অলংকার, রত্ন, আভিজাত্য পোশাক, রূপচর্চা, সন্তান প্রতিপালনে কেটে যেত সেই জেনানায় থেকেই | বাইরের পুরো জগৎ টা ছিল পর্দার আড়ালে | রাজপূতরা শৌর্যের প্রতীক, সেখানে রাজপরিবারের মেয়েরাই জীবন কাটাতেন পর্দার আড়ালে ! সেই সমাজের বাকি মেয়েদের কথার ভাবনাটা সেটাও ইতিহাসেই থাক মনে হয় যতটা না ভাবা যায় তাই বোধহয় ভালো ! 😏😏😏
Related Post : My days in the Pink city, Jaipur
Nice one, effort involved must be appreciated.
ReplyDelete