ঘটনাটা ১২৯৪ সালের পর, ইতালির বণিক-পর্যটক মার্কো পোলো তাঁর নিজের দেশে ফিরে যাবার পরে, তাঁর ভ্রমণের বৃত্তান্ত বন্ধু-বান্ধবদের যখন বলতে শুরু করলেন, এক মজার ঘটনা ঘটেছিলো। যার জন্য তাঁকে সবাই মিথ্যে বাদী বলতেন, বেচারা, প্রমান দিতে পারেন নি বলে ।
আনুমানিক ১২৯২ থেকে ১২৯৪ সালের মধ্যে মার্কো পোলো ভারতে এসেছিলেন, ইতালিতে তার অটোবায়োগ্রাফি (বা ভ্রমণকাহিনী ই.এ. travelogue) "বুক অফ দি মার্ভেলস অফ দি ওয়ার্ল্ড " যা ইংরেজিতে "দি ট্রাভেলস অফ মার্কো পোলো " নাম সুপরিচিত, যেটা অনুবাদ করেছেন আরেক বিখ্যাত ইতালীয় লেখক রুসতিছেল দা পিসা (রুসতিসিয়ানো) । পোলো দুই বার ভারতে আসেন, প্রথম বার খুব অল্প সময়ের জন্য, পরের বার প্রায় দেড় বছরের বেশি ছিলেন । মার্কো পোলো ইতালিতে ফিরে গিয়ে ভারত বর্ষ সম্পর্কে ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য, সমৃদ্ধশালী এক 'জ্ঞানের ভান্ডারের দেশ' তা তো বলেইছেন, সাথে ফলাও করে এক বিচিত্র ময় গাছের গপ্পো জুড়লেন । বিরাট লম্বা এক গাছ, তাতে শাখা-প্রশাখা, ডাল-পালা কিচ্ছু নেই, শুধু মগডালে কিছু খোঁচা-খোঁচা চুলের মতো কয়েক গুচ্ছ কাঠি-কাঠি পাতা । খুব শক্ত গাছ, ঝড়ে উল্টায় না, সহজে কাটাও যায় না, অনেকদিন বাঁচে, আর ফল ঠিক মানুষের মাথার আকারের, এইয়া বড়ো, আর হেব্বি শক্ত, কাঁচায় রং সবুজ আর কিছুদিন পর ধূসর রং ধরে । তবে সেই ফলের ভেতরটা নরম, সুমিষ্ট জল আর সাথে মিষ্টি শাঁসালো অংশ । খেতে কি মিষ্টি ! তেষ্টার সময় প্রাণ জুড়িয়ে যায় সেই জল খেলে । আর ওই দেশের নাগরিকেরা সেই ফল দিয়ে কতকিছু খাবার তৈরি করে, যেকোনো শুভ কাজে মাথার মতো শক্ত ওই ফল তাঁরা ব্যবহার করে ।
সেই গাছের ও তার ফলের নামকরণ ঘটা করে হয় নি, তখনো । ক্যামেরাও আবিষ্কার হয় নি যে ছবি তোলা যেত । আর উনি পেইন্টিং ও করেন নি, আসলে বুঝতে পারেননি এমনাবস্থা হতে পারে । কেউ বিশ্বাসই করলো না তার কথা, হাহা হিঃহিঃ হয়ে গেলো পুরো ব্যাপারটা । যাকে বলে খিল্লি । বন্ধু সার্ক্যেলে মার্কো পোলোর নামই হয়ে গেলো মিথ্যুক হিসেবে, ভাবা যায় ।
এই গাছটা হলো, আমাদের অতি পরিচিত নারকেল গাছ, মার্কো পোলোর ভারতে আসার আগে আমাদের দেশে নারকেল গাছের (মূলত এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দ্বীপপুঞ্জ থেকে আমাদের দেশে আসে) আবির্ভাব ঘটেছিল, আর এই ইতালির বণিকের কাছে তা ছিল এক অত্যাশ্চার্য গাছ ও ফল । তারপর এই নারকেল গাছ নিয়ে বলতে শুরু করলে তাঁর ওই দশা হয়েছিল । নারকেলের ইংরাজি মানে 'কোকোনাট' শব্দটা এনসিয়েন্ট পর্তুগীজ শব্দ কোকো থেকে এসেছে , যার অর্থ মাথা বা মাথার খুলি ।
বালাই বাহুল্য ঝুনো নারকেল প্রায় ১০০ দিন বাঁচে ও জলে ৫০০০ কিমি ভেসে যেতে পারে
Comments
Post a Comment